Headline

♥♥♦ Bangla Newspapers Visit This Website♥ ♥♥

কারিগরি শিক্ষা নিলে চাকরি মিলবে অতি সহজে




কারিগরি শিক্ষা সম্পরকে আর জানতে 


দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব যে অপরিসীম তা আমরা অনেক আগে থেকেই অনুভব করতে সক্ষম হই। এ প্রেক্ষাপটে অতি সম্প্রতি শিক্ষার মানোন্নয়নে এক হাজার ৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করে, যেখানে ১০০টি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সরকার বলছে, মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। গত সাত বছরে কারিগরি শিক্ষার হার ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যেখানে সাত বছর আগে এ হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ও এ শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।

কারিগরি শিক্ষা গুরুত্ব পায় যখন সরকার আলাদাভাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড গঠন করে এবং এ শিক্ষার জন্য নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে এ শিক্ষা বিশেষ গুরুত্ব পায় এবং ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলে। মেয়েদের কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও আকৃষ্ট করতে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলা ও উপজেলায় ক্রমান্বয়ে স্থাপন করা হয় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যেখানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক যুগের চাহিদা ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে প্রযুক্তিগত শিক্ষা দেওয়া হয়।


এ সময় থেকে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সমানতালে বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত লোকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও বেকার যুবক ও মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আবার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ইউসেপ নামের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল শিক্ষা দিয়ে আসছে। তবে এত সব আয়োজন সত্যিকার অর্থে একাডেমিক শিক্ষার মধ্যে পড়ে না। এতে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

দেশের চাহিদা মেটানো ও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতে ব্যাপক কারিগরি শিক্ষা প্রয়োজন। সরকার এ ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের দিকে হাঁটছে বলেই আমাদের মনে হয়। সরকার যখন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করছে এবং এগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে তখন এখানকার চাহিদা মেটানোর জন্য কারিগরি শিক্ষা ও প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০টি কারিগরি স্কুল ও কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ কর্মসংস্থান সুযোগে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে স্থানীয় সম্পদ ও স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহারের এক সুযোগ তৈরি হবে।

এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কাছাকাছি কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ করতে পারবে। তবে ভৌগোলিক বিচারে, আঞ্চলিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষার ধরনের মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা হবে ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্র। আবার দেশের বাইরের চাহিদার প্রতিও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা আমাদের জনশক্তি বিশাল। এখানে বাইরের বাজার না ধরতে পারলে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। আমরা অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানিতেই সীমাবদ্ধ থাকব।

সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা-এ দুয়ের মধ্যে গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য থাকার ফলে বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ আজকে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং গোটা বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। চীন তাদের মধ্যে অন্যতম। আমাদের অর্থনৈতিক শক্তির চালিকাশক্তি এখনকার সময়ে কৃষি, গার্মেন্ট ও জনশক্তি রপ্তানি। কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের কিছু পরামর্শ প্রদানে বাম্পার ফসল পাওয়া যাচ্ছে। গার্মেন্ট সেক্টরে অদক্ষ নারী শ্রমিক কাজ করছে। আর জনশক্তি রপ্তানিতে আমরা এখনো অদক্ষ ক্যাটাগরিতেই রয়ে গেছি। আমাদের অর্থনৈতিক শক্তির জন্য বিকল্প প্রয়োজন এ কারণে যে কৃষিতে আমাদের সাফল্য ভালো; কিন্তু প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আমাদের ঝুঁকির জায়গা গার্মেন্টশিল্প।

কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব আমাদের দেশে এতটাই বেশি, যা আমরা এমনকি প্রাত্যহিক জীবনেও পদে পদে অনুভব করি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো জিনিসপত্র মেরামতের জন্য হাতের কাছে সময়মতো লোক পাওয়া যায় না। আবার শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি হয় প্রায়োগিক কিছু সৃষ্টি করা, সে ক্ষেত্রে আমাদের কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। সৃষ্টিশীল বিষয় কর্ম সৃষ্টিতে অবদান রাখে। সৃষ্টি বিষয় অন্যের কাছে বিক্রি করেও আমরা লাভবান হতে পারি। আমাদের কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য কারিগরি শিক্ষা অতীব প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস, সরকার সেদিকেই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে যাচ্ছে। শুধু ১০০টি কেন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হোক। প্রতিটি উপজেলা হয়ে উঠুক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের একেকটি মিলনকেন্দ্র।

No comments

Thanks for comments

Powered by Blogger.